যেভাবে সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হয়ে উঠবেন
সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা সাধারণই। ভয় পাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। তবু কারও কাছে আগ্রহের বিষয়, কারও-বা ভয়ের কারণ। আগ্রহ বা ভয় যেটাই থাক না কেন মোদ্দা কথা হলো, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা তথা বিসিএসের ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানে আপনাকে অসাধারণ হতেই হবে। শুধু প্রিলিমিনারি নয়, লিখিত ও ভাইভায় এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এটি পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তি গড়া শুরু হয় মূলত প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির সময়। এই পর্যায়ে সময়ও তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। তাই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। এ সময়ে যে যত কৌশলী হবে সে তত ভালো করবে। মনে রাখবেন, সময় না থাকা আর সময় থেকেও কাজে না লাগানো একই কথা।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনায় যথাক্রমে ৩০, ২০ ও ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। একটু সচেতন হলেই প্রিলি পরীক্ষায় আপনার প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে এই ৬০ নম্বর। এ ছাড়া বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে যথাক্রমে ২০০ ও ১০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে, যা লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতায় বরাদ্দ মোট নম্বর অথবা ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বরাদ্দ মোট নম্বরের সমান। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের লিখিত পরীক্ষায় যে ৪০ ও ৫০ নম্বরের রচনা বা প্রবন্ধ লিখতে হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা সাধারণ জ্ঞাননির্ভর হয়ে থাকে। একইভাবে ব্যাংক জব পরীক্ষায় ফোকাস রাইটিং/কম্পোজিশন অংশে প্রধানত সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে হয়।
সরকারি ও বেসরকারি অন্য সব চাকরি পরীক্ষার প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা—প্রতিটি ধাপে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও সমসাময়িক ঘটনাগুলো মোট নম্বরের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রাখে। উল্লেখ্য, তুলনামূলক বেশি নম্বরের সাধারণ জ্ঞানে একটু সচেতন ও সতর্ক থাকলেই ভালো করাও সহজ। গণিত, বিজ্ঞান বা ইংরেজিতে যেখানে আগে থেকে মজবুত মৌলিক জ্ঞান না থাকলে ভালো করা কষ্টসাধ্য, সেখানে সাধারণ জ্ঞানে কিন্তু আগে থেকে আপনার মৌলিক জ্ঞান ভালো না থাকলেও পরিকল্পিত পরিশ্রমে কারো সহযোগিতা ছাড়াই আপনি দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন এবং কিছু তথ্য টপিকভিত্তিক নোট করে পড়লে মনে রাখা যাবে আর ভালো নম্বর তোলা সহজ হবে। সুতরাং ঠিকঠাক গুরুত্ব দিলে চাকরির বাজারে আপনাকে সফল করতে অসাধারণ হয়ে উঠবে এই সাধারণ জ্ঞান। তাই এই অংশে ভালো করার জন্য নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার কৌশলঃ-
⇒ প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। দৈনিক এক ঘণ্টা সময় দিতে হবে। পাঁচটি পাতা ভালো করে দেখবেন। প্রথম, শেষ, সম্পাদকীয়, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার এক বা একাধিক পত্রিকা পড়তে পারলে ভালো হয়।প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করুন।
⇒ বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিত চোখ রাখতে হবে। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে নিজের মতামত দেওয়া শিখতে হবে।
⇒ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত কোথাও পেলে তা ডায়েরিতে নোট করে রাখা যেতে পারে।
⇒ সংবিধান সাধারণ জ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে। যথা: ১) সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস, ২) গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ এবং ৩) সংশোধনীসমূহ। ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে নিচের অনুচ্ছেদগুলো ভালো করে পড়তে হবে। যথা: ২(ক), ৩, ৪, ৪(ক), ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬,১৭, ১৮, ১৮(ক), ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৩(ক), ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৬, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০২, ১০৬, ১০৮, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪১(ক), ১৪১(খ), ১৪১(গ), ১৪২, ১৪৮, ১৫৩।
⇒ যেসব বিষয়বস্তু কঠিন মনে হয়, সেগুলো ছন্দ বা সূত্র বানিয়ে মনে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া নিজের পরিচিত কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে মনে রাখা যেতে পারে। যেমন আপনার পরিচিত যদি কারোর নাম আকবর থাকে তাহলে সম্রাট আকবর সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো পরিচিত আকবরের সঙ্গে মিলিয়ে মনে রাখলে পরবর্তী সময়ে ব্রেন সহজে মনে করিয়ে দেবে।
⇒ সব ঘটনার তারিখ বা সাল মনে রাখা সহজ নয়। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তারিখ ও সাল মনে রাখলেই হবে।
⇒ বাংলাদেশ ও বিশ্বের দুটি মানচিত্র সংগ্রহে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে মানচিত্রে চোখ বুলিয়ে নিজের পঠিত বিষয়ের সঙ্গে মেলালে স্মৃতিতে থাকবে।
⇒ সাধারণ জ্ঞান সব সময় পরিবর্তন হতে থাকে। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যা বর্তমানে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে তা পড়ার দরকার নেই।
⇒ ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটসহ পড়তে চেষ্টা করুন। এতে গল্পের মতো তা মনে রাখা যায়।
⇒ ফেসবুকের বিভিন্ন চাকরির গ্রুপ, পেজ থেকে সাধারণ জ্ঞানের নিয়মিত আপডেট পেতে পারেন। এ ছাড়া শুধু সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য ফেসবুকে BD STUDY CORNER নামে গ্রুপ রয়েছে। সেখানে সাধারণ জ্ঞানের আপডেট, মৌলিক প্রস্তুতিসহ সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন লেখা পোস্ট করা হয়।
⇒ পরীক্ষার একেবারে কাছাকাছি ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা ততটা জোর দিয়ে না পড়লেও চলবে।
⇒ বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পড়ার জন্য প্রতিদিন সময় বরাদ্দ রাখবেন। চর্চার ওপর না থাকলে ভুলে যাবেন।
⇒ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধানগণের নাম ও তাঁদের সর্বশেষ সম্মেলন কোথায় হলো মনে রাখুন।
⇒ সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান, অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল, ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বই পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটা সাধারণ জ্ঞানের গাইড বই ও তথ্যভিত্তিক মাসিক ম্যাগাজিন পড়তে পারলে কাজে দেবে। আর সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংগ্রহে রাখুন। আমাদের সাইটে প্রতিমাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন এখানে।
⇒ পরিশেষে, বিভিন্ন আলোচনাসভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তথ্যভিত্তিক আলোচনা করলে ধীরে ধীরে সাধারণ জ্ঞান বাড়বে।
এভাবে পড়তে পারলে সাধারণ জ্ঞানের অবস্থান আরও ভালো জায়গায় চলে যাবে। আর কিছু প্রশ্ন অজানা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে খুব বেশি হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। খেয়াল রাখবেন, যা আয়ত্ত করেছেন তা যেন ভুল না হয়। সামান্য পড়ে ছেড়ে দিলে দেখবেন কনফিউশন হবে। তাই ভালো করে আয়ত্ত করুন। তাহলে ভালো পরীক্ষা হবে।
যেভাবে সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হয়ে উঠবেন ছাড়া আরও পড়ুনঃ
Focus writing – Functions of commercial Bank
ফেইসবুকে আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল পেইজ ও অফিসিয়াল গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকুন। ইউটিউবে পড়াশুনার ভিডিও পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।
আপনার টাইমলাইনে শেয়ার করতে ফেসবুক আইকনে ক্লিক করুন।